Thursday, September 12, 2013

ভুল .....................মোঃ নুরুন্নাবী

মতিঝিল ইত্তেফাক মোড়ের পাশে দোতলা বাসাটি শ্রুতিদের । শ্রুতির বাবা একজন সরকারী চাকরিজীবী । চাকরির সুবাদেই এই বাসাটি পেয়েছে শ্রুতির বাবা । শ্রুতিদের সংসারে লোক সংখ্যা ৩ জন কিন্তু দোতলা বাড়ীতে মোট রুম সংখ্যা ৬ টি । শ্রুতিরা থাকে নীচ তলায় । উপরের তলা ভারা দেয় তার বাবা । শুক্রবারে বাড়ীতে সদস্য সংখ্যা একজন বাড়ে সে হল শ্রুতির মামা । গ্রামের বাড়ীতে না গেলে শ্রুতিদের বাড়ীতে আসে । শ্রুতির সম বয়সী এক্তা ছেলে আসে শ্রুতির মামার গ্রামের ইস্কুলে পড়াশোনা করে  নাম মিসুক ।

মিসুক ক্লাস ৫ পর্যন্ত গ্রামে পড়াশোনা করেছে । সে ছাত্র হিসেবে খুব ভাল । ক্লাস ৫ এ বৃত্তি পেয়েছে । মামা ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার পরিবার সহ ঢাকা চলে আসে উঠে শ্রুতিদের উপরের তলায় । শ্রুতি অ মিসুকের মধ্যে দারুণ ভাব সব সময় একসাথে খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে রাতে ঘুমনোর আগ পর্যন্ত । শ্রুতি অ মিসুক একই ইস্কুলে ভর্তি হয় তাদের পরীক্ষার ফলাফলে কেউ প্রথম কেউ দ্বিতীয় হয় । শ্রুতিদের বাসার সামনে একটু ছোট জায়গা আসে যেখানে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে । ফেব্রুয়ারি মাসে এ গাছটা ফুলে ফুলে ভরে উঠে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে । শ্রুতির মা মুরগী পালে বাড়ীর খালি জায়গায় । শ্রুতির প্রতিদিনের অভ্যাস সকালে উঠেই মুরগী দিম পেরেছে কি না । মিসুক আসার পর মিশুকও ওর সাথে প্রতিযোগিতা করে সকালে উঠে দিম খোঁজার জন্য । একদিন মিসুক মুরগী ডিম পেরেছে কি না দেখতে গিয়ে পচা দুটো ডিম রেখে আসে । শ্রুতি যথারীতি ডিম নিয়ে এসে ডিম ভাজার জন্য ফাটিয়েছে তখনি ডিমের পচা গন্ধে ঘর আল হয়ে গেছে । শ্রুতি তখনি উপর তলায় গিয়ে মিসুকের পিথে ৮-১০ টা কিল বসিয়ে ফিরে আসে । ওদের এসব কাণ্ড দেখে মা বাবা মামা মামি সবাই হাসা হাসি করে । একদিন কি মনে করে যেন মিসুক নিচতলায় এসেছে ঠিক তখনি শ্রুতি গোসল করে নগ্ন অবস্থায় বাইরে এসেছে । মিশুককে দেখে শ্রুতি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে ঘরে চলে গেছে আর মিশুকও লজ্জায় উপর তলায় চলে গেছে । এরপর প্রায় সপ্তা খানেক শ্রুতি অ মিসুকের কথা বলা বন্ধ এমনকি সামনাসামনি পরলেও লজ্জায় লাল হয়ে যায় দুজনি ।

শ্রুতি ও মিসুক দুজনি এস এস ছি পরীক্ষায় এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ।  এস এস ছি পরীক্ষা পর্যন্ত তারা একই ইস্কুলে পড়েছে । এখন তাদের ভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে । মিসুক নটরডেম কলেজে আর শ্রুতি আইডিয়াল কলেজে । বাসার সবাই মিলে মাঝে মাঝে আড্ডা দেয় বাসার ছাদে । দুজনের এস এস ছি পরীক্ষার পর যে অবসর সময় ছিল বাসার প্রতিদিন না হলেও শ্রুতি অ মিসুক নিয়মিত আড্ডা দিত । এই সময়ে তাদের ভিতরকার যে বন্ধুত্ব সেটা ভালবাসার দিকে আগায় যদিও কেউ কাও কে কখনও বলেনি মুখে । শ্রুতির স্বভাবে যেমন পরিবর্তন এসেছে, পরিবর্তন এসেছে তার দেহে । মিশুকেরও তাই । শ্রুতি এখন দেখতে অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে তার চুল হয়েছে কোমর পর্যন্ত, চিকন তার শরীরের গড়ন, মুখের দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায় না । মিসুক আর আগের মত লিকলিকে দেহী নয়, তার সাস্থের উন্নতি হয়েছে ,আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়েছে । তারা মাঝে মাঝে দুজনে একসাথে তারা দেখে তখন দুজন কাছে আসতে চায় কিন্তু পারে না ।

মিসুক ঘুমিয়ে আছে দোতলায় তার নিজের ঘরে । হঠাৎ শ্রুতি আসলো তার ঘরে , শ্রুতির একা ঘুম আসছিলো না । শ্রুতি মিসুকের পাসে শুয়ে পড়ল । মিসুক শ্রুতিকে জ্বরিয়ে ধরল , শ্রুতি কোন শব্দ করল না নিঃশব্দে মিশে গেল মিসুকের বুকের সাথে । তারপর দুজন দুজনকে সমর্পণ করলো একে অন্যকে । তারা যেন এখন এক আত্মা, এক দেহ । হঠাৎ চোখ মেলল সে ভাবল সে স্বপ্ন দেখেছে । মিসুক পাসে ফিরে তাকাল দেখল শ্রুতি তার পাসে শুয়ে আছে । মিসুক নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা স্বপ্ন না সত্যি । সে নিজের গায়ে চিমটি কাটল সে বাথ্যাও পেল মানে স সত্যি । এরপর সে শ্রুতিকে ডাকল শ্রুতি ঘুম থেকে জেগে সেও অবাক হল । কিন্তু কিছু না বলে কাপড় ঠিক করে নিচে চলে গেল । এ ঘটনার পর শ্রুতি ও মিসুকের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হল।

মিশুককে ছাদে নিয়ে এসেছে শ্রুতি এক্তা কথা বলার জন্য । কথাটা শ্রুতি বলতে গিয়ে কেন যেন বলতে পারছিলো না । অবশেষে বলল," সে সন্তান সম্ভাবা ।" কথাটা শোনার পর মিসুকের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । মুহূর্তের মধ্যে তার মাথা খালি হয়ে গেল । সে দপাস করে ছাদের উপর বসে পড়ল । মিসুক ও শ্রুতি দুজনেই কেবল কলেজে উঠেছে ,এ সময় তার সন্তান শ্রুতির পেটে । এখন সে কি করবে ,সে তো মা বাবা ত দুরের কথা কাও কে বলতে পর্যন্ত পারবে না । মুসুক শ্রুতির দিকে তাকাল তার মুখটা কাল চোখের নিচে কালি পরে গেছে মনে হয় কয়েক দিন ঘুম হয় না  শ্রুতির । মিসুক এখন কি করবে সে কি গোপনে শ্রুতিকে বিয়ে করবে আর যদি বিয়েও করে তাহলেও ত সমাধান হচ্ছেনা কারন সে এখন বাবা হতে পারবে না  পারবে না শ্রুতি মা হতে করন তার কোন আয় রোজগার নাই ।সে বিয়ে করলে খাওয়াবে কি ? মিসুক ও শ্রুতির বাবা মার কেউ মেনে নিবে না । মিসুক আবার তাকায় শ্রুতির পেটের দিকে সে বুঝতে চায় শ্রুতি যে সন্তান সম্ভাবা সেটা বুঝা যায় না কিন্তু কয়েক দিন পরি তো বঝা যাবে । পাড়ার লোকে শ্রুতিকে নানা কথা বলবে এসব সহ্য করতে না পেরে হয়তো শ্রুতি গলায় দড়ি দিবে না হয় বিষ খাবে । না সে আর চিন্তা করতে পারছে না । মিসুক শ্রুতিকে চিন্তা করতে বাড়ন করে নিচে যেতে বলে । শ্রুতি চলে যায় কিন্তু হাজার মণের বোঝা যেন চাপিয়ে দিয়ে যায় ।

মিসুক ১০ হাজার টাকা যোগাড় করেছে । শ্রুতির পেটে তার অনাগত সন্তানের মৃত্যু নিস্তিত করতে । শ্রুতি ও মিসুক রিক্ত হস্তে বাড়ী ফিরল । মিসুক সেদিন সারা রাত কেঁদেছকে , কেঁদেছে শ্রুতিও । চোখের পাতা এক করতে পারেনি দুজনের কেউই ।

শ্রুতির জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে । মিসুক প্রতিদিনি তাই দেখছে তার কিছু করার নেই । মিসুক ও শ্রুতি আগের মত ছাদে আড্ডা দেয় না কথা বলে খুব কম। তারা যেন দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে । সেই দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিল শ্রুতির বিয়ে হয়ে । শ্রুতি তার বিয়েতে অমত করে নি কারন তার সাথে মিসুকের বিয়ে কোন ভাবেই সম্ভব নয় । সে এও জানে মিসুক ছাড়া অন্য কওকে সে পরিপূর্ণ ভাবে ভালবাসতে পারবে না । বিয়ের কয়েক দিন আগে থেকে মিসুকের সাথে শ্রুতির কথাত দুরের কথা দেখা পর্যন্ত হয় নি । বিয়ের আগের দিন রাতে শ্রুতি ছাদে যায় সেখানেই দেখা হয় মিসুকের সাথে। সে মিসুকের কাঁধে, মিসুক ফিরে তাকায় । মিসুকের চোখ ফোলা এখন চোখের কোনায় জল আছে । শ্রুতি মিশুককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে , কাঁদে মিশুকও । অনেক্ষন পর কান্না থামে শ্রুতি মিসুকের ঠোঁটে একটা চুম্বন একে চলে যায় ।

শ্রুতির সাথে বছর দশেকের উপর দেখা নেই । মিসুক চায় না শ্রুতির সাথে দেখা হোক । মিসুক শুনেছে শ্রুতির স্বামী খুব ভাল মানুষ যদিও শ্রুতির কোন সন্তান হয়নি তবুও স্বামী তাকে ত্যাগ করে নি বরং শ্রুতিকে এ কথা কখনও মনে করতে দেয় না । শ্রুতির স্বামী তাকে অনেক বার যেতে বলেছে বাড়ীতে কিন্তু সে কখনও জায় নি । মিসুক এখন প্রথম স্রেনির সরকারি কর্মকর্তা । তার বিয়ের বয়েস পার হয়ে গেছে অনেক আগেই মা বাবা বিয়ের কথা বলতে বলতে অবশেষে কিছু করতে না পেরে তারা চলে গেছে গ্রামের বাড়ীতে । মিসুকের অফিস বাদে অন্য সময় সে কমলাপুরের পথ শিশুদের শিক্ষা দান করে । সে তার বেতনের টাকা দিয়ে কাপড় চোপর কিনে দেয় তাদের । এদের মধ্যে একটা মেয়েকে তার খুব ভাল লাগে যার বয়স ৯ বছর । সে এই মেয়েকে দেখে আর ভাবে তার সন্তানটি হয়ত এর চেয়ে বড় হত । মিসুক এসব পথ শিশুদের মাঝে খুঁজে পায় তার সন্তানের ছায়া ।

উৎসর্গ ঃ
আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষিকা সপ্না ।

Wednesday, September 11, 2013

পরিপূরক ........................মোঃ নুরুন্নাবী

বাড়িতে হাজার হাজার রঙিন বাতি জ্বলছে ও নিভছে । বাড়িটা লোকে লোকারন্ন , আজ শুভর বিয়ে ।মেয়েকে শুভ এখন দেখেনি । বর্তমান সময়ে এরকম দেখা না গেলেও শুভ একটু আলাদা । শুভ ও ওর স্ত্রী শাহানা বহন কারি গাড়ি বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবার ভিতর চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছ , সবাই বউ দেখার জন্য অস্থির হয়ে গেসে। শুভর স্ত্রী শাহানাকে শুভর রুমে নিয়ে যাওয়া হল । সবারই শাহানাকে দেখতে আসছে, সবার দেখা শেষ করতে করতে রাত ১ টা বেজে গেল । শুভ ঘরে প্রবেশ করল শাহানা তার ভারি গহনা অ শাড়ি কাপড় ছেঁড়ে হাত মুখ ধুয়ে আসল। যেহেতু শুভ ও শাহানা কেউ কাওকে দেখেনি তাই তাদের পরিচয় ও কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেসে জানে না।
সকাল ৬ টায় শুভ ২ কাপ কফি মগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করল । শাহানাকে ঘুম থেকে জাগালো শুভ , শাহানা হাত মুখ ধুয়ে আসলে শাহানার হাতে কফি মগ দেয় শুভ । কফি মগ দেখেই অবাক হয় শাহানা কারন কফির উপরের অংশে সুন্দর পাতা আঁকা ও কি সুন্দর সুগন্ধ বের হচ্ছে। দুজনে কফি খেয়ে নিচে নেমে সবার সাথে নাস্তা করতে বসল । আত্মীয় স্বজন সবার সাথে কথা অ পরিচয় হতে হতে সাড়া দিন চলে গেল শাহানার ।
রাত ১২ টা শুভ ঘুম থেকে উঠে শাহানাকে জাগালো । শাহানা শুভকে বলল,"কি বাপার!"
শুভ বলল," তাড়াতাড়ি তৈরি হও আমরা বাইরে যাবো ।"
" বাইরে কথায়?"
"এত কথা না বলে তৈরি হও আমি গাড়ি বের করছি। "
শাহানা সবুজ রঙের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি পড়ে নিচে নামল। শাহানাকে দেখতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে কিছুক্ষণ শুভ শাহানার দিকে তাকিয়ে রইল এতে শাহানা লজ্জায় লাল হয়ে গেল । শুভ গাড়ীর দরজা খুলে দিলো । গাড়ি চলছে অজানা গন্তবে ।
গাড়ীর কাচ দুটো নামানো বাইরে থেকে হিহি করে বাতাস ডুকছে । ঢাকার রাতের শহর শুভ অনেকবারই দেখেছে কিন্তু আজ যেন অন্যরকম লাগছে । আসে পাসের সব কিছুই ভাল লাগছে । রাতের ঢাকা থাকে নিরব মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রাকের শব্দে সেই নীরবতা ভাঙ্গে । শুভদের গাড়ি ঢাকা পার হয়ে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছে । শাহানা গাড়ীর জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাইরের দৃশ্য দেখছে । বাইরের বাতাস শাহানার পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট বাতাস মনে হচ্ছে । শুভ আশুলিয়া এসে গাড়ী থামাল । দুই পাশে থই থই পানি এখন শরৎকাল হওয়ায় পানি খুব পরিষ্কার লাগছে মনে হচ্ছে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে । শুভ ও শাহানা রাস্তার পাসে ঘাসের উপর বসল । তাদের কাছে ঘাসকে ঘাস মনে হচ্ছিলনা মনে হচ্ছিল নরম কার্পেট । শুভ শাহানার একটা হাত নিজের হাতের উপর রেখে শাহানার দিকে তাকাল চাঁদের আলোতে যেন শাহানার মুখ জ্বলজ্বল করছিলো । শুভ মনেমনে ভাবে শাহানাকে না দেখে বিয়ে করাটা সবচেয়ে ভাল হয়েছে , করণ সে শাহানাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নতুন ভাবে আবিস্কার করবে বারবার তাকে নতুন মনে হবে পুরনো হওয়ার আগেই হয়ত ইহলোক ত্যাগ করবে ।
শাহানার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে তার কাছে মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় পার করছে । শাহানা শুভর ঘারে মাথা রেখে আকাশ দেখছে । আজ মনে হয় তাদের জন্যই আকাশটা এত সুন্দর করে সেজেছে । আকাশে বিন্দু মাত্র মেঘ নেই সেই মেঘহীন আকাশের বুকে এক ফালি চাঁদ আর বেশি ভাল লাগছে । ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি তাদের কানে আসছে । আর কিছুক্ষণ পর সকাল হবে শুভ ও শাহানা বাড়ী ফিরে আসার জন্য রওনা দিলো ।

বাবা মা  ও দাদু আজ গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছে শুভর। বাড়ী পুরো ফাঁকা হয়ে গেল । শাহানা একজন এমবিবিএস ডাঃ আর শুভ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক । শুরু হল তাদের বাস্ত জীবন তারা বাস্ত থাকলেও নিজেদের জন্য নিদিষ্ট সময় কখন কাওকে দিত না । শুভ সেই বিয়ের প্রথম দিন শাহানার আগে উঠতে পেরেছিল । ঘুম ভাংগার সাথে সাথে শাহানা শুওর জন্য এক কাপ কফি দেয় আর শুভ দ্রুত গিয়ে শাহানার জন্য কফি বানিয়ে আনে । দুজনে কফি খেয়ে নাস্তা করে যার যার কর্মক্ষেত্রে যায় । প্রতিদিনই এভাবে কাটে তাদের কিন্তু শুক্রবার একটু আলাদা । সাধারণত রান্নার দায়িত্ব থাকে শাহানার উপর কিন্তু এই দিন শুভ বিভিন্ন মজার খাবার তৈরি করে যা সে শিখেছে তার মায়ের কাছ থেকে । প্রতিটা শুক্রবারই তাদের জন্য ঈদের মত ।

শাহানা ও শুভ প্রায়ই সুযোগ পেলে গ্রামে বেড়াতে যায় । গ্রামের বাড়ীতে শুভদের আধা পাকা দুটি ঘর আছে একটি শুভর বাবা মার অন্যটি শুভর । শুভ ও শাহানার ঘরটা সুন্দর করে সাজানো ঘরের এক কোণায় থরে থরে সাজানো বুক সেলফ অন্য পাসে একটা খাট পাসে একটা পড়ার টেবিল । শুভর মাছ ধরার প্রচণ্ড নেশা এজন্য তার ঘরে কয়েক ডজন মাছ ধরার সিপ আছে । শুভর রাত্রে চাঁদ দেখার খুব শখ তাই সে ঘরের চালের একটা অংশ কাচ বিয়ে তৈরি করেছে যাতে সে শুয়ে থেকেও চাঁদ দেখতে পারে । তাদের বাড়ীটা বেশ বড় তাদের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সবজি আসে তাদের বাড়ীর আগিনা থেকে । তাদের একটা পুকুর যেখানে গোসল করার জন্য শানবাঁধানো ঘাট আছে । তার বাবা পুকুরে কার্প জাতিও মাছ  ও কচ্ছপ চাষ করে । পুকুরের চার পাসে নারকেল গাছের সারি । বিকেলে বসার জন্য শুভ দুটি বেঞ্চ তৈরি করেছে । শুভ ও শাহানা বাড়ীতে গেলে দুজনে সিপ দিয়ে মাছ ধরে পুকুরে । সারারাত মাছ ধরাতে দুজনেই ভীষণ রকম আনন্দ পায় । তাদের এ রাতে মাছ ধরার কথা বাড়ীর কেউ জানতোনা । চুপিচুপি মাছ ধরে বালতিতে জিইয়ে রাখত । সকালে উঠে সবাই অবাক হত । একদিন দাদুত প্রায় ভয় পেয়ে গিয়ে ছিল তাদের দেখে । পরে দাদু বলে,"দুই নায়ক নায়িকা মিলা মাছ ধরা হচ্ছে আমাকে না জানিয়ে!"
শুভ ও শাহানা বললাম ,"ভুল হয়ে গেসে । মাফ করে দাও ।"
"যা দিলাম মাফ করে । আমি যাই ।" বলে দাদু চলে গেল ।

আজ শুভ ও শাহানার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন । গ্রামে গেলে যার কোরআন তেলাওয়াত এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গত । যেই পছন্দ করে শাহানাকে শুভর বউ হিসেবে ঠিক করেছে সেই দাদু আজ ইহলোক ত্যাগ করেছে ।শুভ সব সময়ই বাস্তববাদী সে বিশ্বাস করে" যখন একজন মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তখন সে ইহলোক ত্যাগ করে পারি জমায় না ফেরার দেশে"। কিন্তু আজকে তাকে এ চরম সত্য সান্তনা দিতে পারছেনা সে কাঁদছে অঝর ধারে কাঁদছে সাথে শাহানাও কাঁদছে। দাদু প্রায়ই বলত ,"একা কবরে থাকতে তোর দাদুর খুব কষ্ট হচ্ছে যে আমাকে ছাড়া কখনও বাপের বারি একা থাকেনি সে এখন একা শুয়ে আছে আমাকে ছাড়া "। আরও বলত মরণের পর তোর দাদির পাসে কবর দিস "। এসব কথা শুনলে শুভর খুব কষ্ট লাগতো । দাদু কত শাহানাকে নিয়ে মজা করত । একদিন বাড়ীতে গেলে দাদু বলল," শাহানা আজকে আমার সাথে গল্প করবে তুই গিয়া ঘুমা ।"
শুভ বাদ্য ছেলের মত চলে আসলো ও এসে শুয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম আসছে না । একবার এ পাস গোড়ে আবার অন্ন পাস । শেষে দাদুর ঘরে গিয়ে শাহানাকে নিতে যায় ।দাদুত দেখে হেসেই খুন । শাহানাও বুজল তাকে ছাড়া শুভ থাকতে পারবেনা এক মুহূর্ত । এর পর থেকে আল্লাহ্‌ এর কাছে একটাই প্রার্থনা করত যাতে তাদের এক সাথে মৃত্যু হয় ।

শুভ ও শাহানার বয়স বেড়েছে মাথার কালো চুল সাদা হয়েছে ,শরীরের চামড়া কুচকে গেসে ।তারা এখন থাকে গ্রামের বাড়ীতে । তাদের দুই সন্তান এক ছেলে ও এক মেয়ে ।মেয়েটা মায়ের মত ডাঃ হয়েছে তবে মায়ের চেয়ে অনেক বড় দেশ বিদেশে যার সুনাম আর ছেলে আর্মি মেজর । ছেলে মেয়ে দুজনি খুব ব্যাস্ত কিন্তু তারা বাবা মাকে কখন ভোলে না ।ছেলে একটা ছেলে ও মেয়ের একটা মেয়ে আছে ।যখন তারা বেড়াতে আসে তখন দাদু দাদি করতে করতে অস্থির হয়ে যায় ।তারা শুভ ও শাহানার সিপ নিয়ে মাছ ধরতে যায় আর মাছ ধরতে পারলে কি যে আনন্দিত হয় তা বলার বাইরে ।আর এটা দেখে শুভর চোখের কোণায় জল চলে আসে । সে শুধু আল্লাহ্‌র কাছে সুক্রিয়া করে ।

শুভ ও শাহানা এখন বাইরে বসে আকাশের চাঁদ দেখে আর চিন্তা কবে যেন শেষ হয়ে যায় এই চাঁদ দেখা । এখন শুভ প্রতিদিন সকালে কোরআন তেলাওয়াত করে । যখন নাতি নাতনী বাড়ীতে দুই পাসে বসে কোরআন তেলাওয়াত শোনে । এ দৃশ্য দেখে শুভর চোখে জল চলে আসে পরে দুজনকে জড়িয়ে ধরে ।

ছেলে ও মেয়ে দুজনেই এসেছে বেড়াতে সাথে ছেলের বউ ,মেয়ের জামাই ও নাতি পুতি । বাড়ীতে একটা উৎসব উৎসব ভাব সবাই মিলে অনেকদিন পর একসাথে রাতের খাবার খেলো এরপর সবাই মিলে উঠানে বসে চাঁদ দেখল ।এর পর সবাই যার ঘরে গেল ।
মাঝ রাতে শুভ ও শাহানা তাহাজ্জতের নামাজ পড়ল এর পর আবার শুয়ে পড়ল । পুব আকাশে সূর্য উঠছে আস্তে আস্তে সূর্যের তেজ বাড়ছে সাথে সাথে বাড়ীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। চারপাশে কান্নার রোল পরে গেসে ছেলে মেয়ের কান্না দেখে গ্রাম বাসিও চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না ।সবাই কাঁদছে,সবাই কাঁদছে ।


উৎসর্গ ঃ
আমি যাকে এ গল্পটা উৎসর্গ করছি জানি সে এই গল্প পড়া ত দুরের কথা জানবেও না , সে মানুষটি আমার দাদা ।

Sunday, September 8, 2013

৩০ সেকেন্ড .....................মোঃ নুরুন্নাবী

সকালে মায়ের সাথে রাগারাগি করে বের হয়েছি। মা পিছন থেকে অনেক বার নাস্তা করে যেতে বললেও না করেই বের হয়েছি। ছোট্ট একটা জিনিস নিয়ে শুধুশুধু মন খারাপ করে বের হয়েছি। মায়ের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে অনুতাপ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে আজও দেড়ি হবে বাস পাচ্ছি না অনেক কষ্ট করে গেলাম কিন্তু গিয়ে শুনি প্রথম দুটি ক্লাস হবে না। মেজাজ আর খারাপ হয়ে গেলো । সময় কাটানোর জন্য ক্যান্টিনে যেতেই শোভার সাথে দেখা যাকে আমি পছন্দ করি কিন্তু বলতে পারি না। অনেক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। কি আর করার দূর থেকেই দেখি। আজ কেন জানি আরেকবার চেষ্টা করতে ইচ্ছা করছে। মনের ভিতর দ্বিধা কাজ করছে। অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর খেয়াল করলাম শোভা ক্যান্টিন বের হচ্ছে নিজের অজান্তেই ওর পিছু নিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর ডাক দিলাম। শোভা পিছনে তাকাল দেখল আমি এর পর সমানে এগিয়ে আসল। যখন ও সামনে এসে দাঁড়াল আমার বুকের ভিতর কেমন জানি ফাঁকা হয়ে গেলো আমি যেন একটা মূর্তি যার নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা নেই,নেই নড়াচড়া করার ক্ষমতা সে শুধু দাঁড়িয়ে থাকে। কয়েক মিনিট পর সম্মতি ফিরল এর মাঝে কয়েক বার ডেকে উত্তর না পেয়ে শোভা চলে গেছে। এরপর আমি ক্লাস এ গেলাম কিন্তু আমি এখনও স্বাভাবিক হচ্ছেনা স্যার পড়াচ্ছেন কিন্তু সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে ক্লাস শেষ করে বের হতেই আবার শোভার সাথে দেখা। ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করল" কথা বললেন না কেন তখন?"
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বল্লাম"না মানে....................."
"না মানে কি?"
আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম বুকের ভিতর কার হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছিলাম। অনেক কষ্টে একটু শান্ত হয়ে বল্লাম,"চল না বসি!"
"ঠিক আছে"
আমি অ শোভা নিচ তলার সিঁড়ির উপর বস্লাম। অনেক্ষন চুপ থাকার পর আমি শোভার দিকে তাকালাম দেখলাম এতো সুন্দর অ সহজ মানুষ তার দরকার। কোত্থেকে যেন অনেক সাহস আসছিল। আমি শোভাকে বল্লাম,"আমি অনেক দিন ধরে তোমাকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি কিন্তু বলতে পারছিনা,আজ মনে হয় বলা উচিত;আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে এখনি বলতে হবে না উত্তর,তুমি চিন্তা করে জানিও।"
এক নিঃশ্বাসে কথা বলার পর দেখলাম আমি গামছি। শোভা অর ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে বলল" ঘাম মছেন।"
এরপর বলল "আমি রাজি।"
আমি বললাম "তোমাকে চিন্তা করে বলতে বললাম কারন আমি প্রেম করলে সে মানুস ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ে করবনা।"
মুচকি হেসে শোভা বল্ল"কি দেবদাস হবেন!"
আর কিছুক্ষণ হেসে বলল" আমি চিন্তা করেছি তো। যে দিন থেকে আপনি আমার পিছনে সেদিন থেকে।"
আমার ভিতর কেমন যেন সুখের বন্যা বয়ে গেল। আমি সাথে সাথে ওকে চুম্বন করতে গেলাম কিন্তু ও বাধা দিলো বল্ল"আরেক দিন"
আমি ও শোভা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ওকে হোস্টেলে রেখে আসলাম।আমি আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরছি। আমি আমার মাথায় হাত দিতেই দেখলাম আমার হাত ভেজা লাগছে। হাত সামনে আনতেই দেখলাম আমার হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে, নড়াচড়া করতে পারছিনা। আমার চারপাশে অনেক মানুষ। আমার চোখ দুটো কেমন যেন বন্ধ হয়ে আসচে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে যদিও কয়েক মিনিট পূর্বেও আমি বাসের উঠার জন অস্থির প্রতিযোগিতা করছিলাম। আমি আর চিন্তা করতে পারছিনা খুব বাঁচতে ইচ্ছা করছে মাকে ছরি বলতে। আমি মনে হয় আটাই শেষ নিঃশ্বাস নিলাম।