বাড়িতে হাজার হাজার রঙিন বাতি জ্বলছে ও নিভছে । বাড়িটা লোকে লোকারন্ন , আজ শুভর বিয়ে ।মেয়েকে শুভ এখন দেখেনি । বর্তমান সময়ে এরকম দেখা না গেলেও শুভ একটু আলাদা । শুভ ও ওর স্ত্রী শাহানা বহন কারি গাড়ি বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবার ভিতর চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছ , সবাই বউ দেখার জন্য অস্থির হয়ে গেসে। শুভর স্ত্রী শাহানাকে শুভর রুমে নিয়ে যাওয়া হল । সবারই শাহানাকে দেখতে আসছে, সবার দেখা শেষ করতে করতে রাত ১ টা বেজে গেল । শুভ ঘরে প্রবেশ করল শাহানা তার ভারি গহনা অ শাড়ি কাপড় ছেঁড়ে হাত মুখ ধুয়ে আসল। যেহেতু শুভ ও শাহানা কেউ কাওকে দেখেনি তাই তাদের পরিচয় ও কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেসে জানে না।
সকাল ৬ টায় শুভ ২ কাপ কফি মগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করল । শাহানাকে ঘুম থেকে জাগালো শুভ , শাহানা হাত মুখ ধুয়ে আসলে শাহানার হাতে কফি মগ দেয় শুভ । কফি মগ দেখেই অবাক হয় শাহানা কারন কফির উপরের অংশে সুন্দর পাতা আঁকা ও কি সুন্দর সুগন্ধ বের হচ্ছে। দুজনে কফি খেয়ে নিচে নেমে সবার সাথে নাস্তা করতে বসল । আত্মীয় স্বজন সবার সাথে কথা অ পরিচয় হতে হতে সাড়া দিন চলে গেল শাহানার ।
রাত ১২ টা শুভ ঘুম থেকে উঠে শাহানাকে জাগালো । শাহানা শুভকে বলল,"কি বাপার!"
শুভ বলল," তাড়াতাড়ি তৈরি হও আমরা বাইরে যাবো ।"
" বাইরে কথায়?"
"এত কথা না বলে তৈরি হও আমি গাড়ি বের করছি। "
শাহানা সবুজ রঙের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি পড়ে নিচে নামল। শাহানাকে দেখতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে কিছুক্ষণ শুভ শাহানার দিকে তাকিয়ে রইল এতে শাহানা লজ্জায় লাল হয়ে গেল । শুভ গাড়ীর দরজা খুলে দিলো । গাড়ি চলছে অজানা গন্তবে ।
গাড়ীর কাচ দুটো নামানো বাইরে থেকে হিহি করে বাতাস ডুকছে । ঢাকার রাতের শহর শুভ অনেকবারই দেখেছে কিন্তু আজ যেন অন্যরকম লাগছে । আসে পাসের সব কিছুই ভাল লাগছে । রাতের ঢাকা থাকে নিরব মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রাকের শব্দে সেই নীরবতা ভাঙ্গে । শুভদের গাড়ি ঢাকা পার হয়ে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছে । শাহানা গাড়ীর জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাইরের দৃশ্য দেখছে । বাইরের বাতাস শাহানার পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট বাতাস মনে হচ্ছে । শুভ আশুলিয়া এসে গাড়ী থামাল । দুই পাশে থই থই পানি এখন শরৎকাল হওয়ায় পানি খুব পরিষ্কার লাগছে মনে হচ্ছে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে । শুভ ও শাহানা রাস্তার পাসে ঘাসের উপর বসল । তাদের কাছে ঘাসকে ঘাস মনে হচ্ছিলনা মনে হচ্ছিল নরম কার্পেট । শুভ শাহানার একটা হাত নিজের হাতের উপর রেখে শাহানার দিকে তাকাল চাঁদের আলোতে যেন শাহানার মুখ জ্বলজ্বল করছিলো । শুভ মনেমনে ভাবে শাহানাকে না দেখে বিয়ে করাটা সবচেয়ে ভাল হয়েছে , করণ সে শাহানাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নতুন ভাবে আবিস্কার করবে বারবার তাকে নতুন মনে হবে পুরনো হওয়ার আগেই হয়ত ইহলোক ত্যাগ করবে ।
শাহানার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে তার কাছে মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় পার করছে । শাহানা শুভর ঘারে মাথা রেখে আকাশ দেখছে । আজ মনে হয় তাদের জন্যই আকাশটা এত সুন্দর করে সেজেছে । আকাশে বিন্দু মাত্র মেঘ নেই সেই মেঘহীন আকাশের বুকে এক ফালি চাঁদ আর বেশি ভাল লাগছে । ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি তাদের কানে আসছে । আর কিছুক্ষণ পর সকাল হবে শুভ ও শাহানা বাড়ী ফিরে আসার জন্য রওনা দিলো ।
বাবা মা ও দাদু আজ গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছে শুভর। বাড়ী পুরো ফাঁকা হয়ে গেল । শাহানা একজন এমবিবিএস ডাঃ আর শুভ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক । শুরু হল তাদের বাস্ত জীবন তারা বাস্ত থাকলেও নিজেদের জন্য নিদিষ্ট সময় কখন কাওকে দিত না । শুভ সেই বিয়ের প্রথম দিন শাহানার আগে উঠতে পেরেছিল । ঘুম ভাংগার সাথে সাথে শাহানা শুওর জন্য এক কাপ কফি দেয় আর শুভ দ্রুত গিয়ে শাহানার জন্য কফি বানিয়ে আনে । দুজনে কফি খেয়ে নাস্তা করে যার যার কর্মক্ষেত্রে যায় । প্রতিদিনই এভাবে কাটে তাদের কিন্তু শুক্রবার একটু আলাদা । সাধারণত রান্নার দায়িত্ব থাকে শাহানার উপর কিন্তু এই দিন শুভ বিভিন্ন মজার খাবার তৈরি করে যা সে শিখেছে তার মায়ের কাছ থেকে । প্রতিটা শুক্রবারই তাদের জন্য ঈদের মত ।
শাহানা ও শুভ প্রায়ই সুযোগ পেলে গ্রামে বেড়াতে যায় । গ্রামের বাড়ীতে শুভদের আধা পাকা দুটি ঘর আছে একটি শুভর বাবা মার অন্যটি শুভর । শুভ ও শাহানার ঘরটা সুন্দর করে সাজানো ঘরের এক কোণায় থরে থরে সাজানো বুক সেলফ অন্য পাসে একটা খাট পাসে একটা পড়ার টেবিল । শুভর মাছ ধরার প্রচণ্ড নেশা এজন্য তার ঘরে কয়েক ডজন মাছ ধরার সিপ আছে । শুভর রাত্রে চাঁদ দেখার খুব শখ তাই সে ঘরের চালের একটা অংশ কাচ বিয়ে তৈরি করেছে যাতে সে শুয়ে থেকেও চাঁদ দেখতে পারে । তাদের বাড়ীটা বেশ বড় তাদের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সবজি আসে তাদের বাড়ীর আগিনা থেকে । তাদের একটা পুকুর যেখানে গোসল করার জন্য শানবাঁধানো ঘাট আছে । তার বাবা পুকুরে কার্প জাতিও মাছ ও কচ্ছপ চাষ করে । পুকুরের চার পাসে নারকেল গাছের সারি । বিকেলে বসার জন্য শুভ দুটি বেঞ্চ তৈরি করেছে । শুভ ও শাহানা বাড়ীতে গেলে দুজনে সিপ দিয়ে মাছ ধরে পুকুরে । সারারাত মাছ ধরাতে দুজনেই ভীষণ রকম আনন্দ পায় । তাদের এ রাতে মাছ ধরার কথা বাড়ীর কেউ জানতোনা । চুপিচুপি মাছ ধরে বালতিতে জিইয়ে রাখত । সকালে উঠে সবাই অবাক হত । একদিন দাদুত প্রায় ভয় পেয়ে গিয়ে ছিল তাদের দেখে । পরে দাদু বলে,"দুই নায়ক নায়িকা মিলা মাছ ধরা হচ্ছে আমাকে না জানিয়ে!"
শুভ ও শাহানা বললাম ,"ভুল হয়ে গেসে । মাফ করে দাও ।"
"যা দিলাম মাফ করে । আমি যাই ।" বলে দাদু চলে গেল ।
আজ শুভ ও শাহানার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন । গ্রামে গেলে যার কোরআন তেলাওয়াত এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গত । যেই পছন্দ করে শাহানাকে শুভর বউ হিসেবে ঠিক করেছে সেই দাদু আজ ইহলোক ত্যাগ করেছে ।শুভ সব সময়ই বাস্তববাদী সে বিশ্বাস করে" যখন একজন মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তখন সে ইহলোক ত্যাগ করে পারি জমায় না ফেরার দেশে"। কিন্তু আজকে তাকে এ চরম সত্য সান্তনা দিতে পারছেনা সে কাঁদছে অঝর ধারে কাঁদছে সাথে শাহানাও কাঁদছে। দাদু প্রায়ই বলত ,"একা কবরে থাকতে তোর দাদুর খুব কষ্ট হচ্ছে যে আমাকে ছাড়া কখনও বাপের বারি একা থাকেনি সে এখন একা শুয়ে আছে আমাকে ছাড়া "। আরও বলত মরণের পর তোর দাদির পাসে কবর দিস "। এসব কথা শুনলে শুভর খুব কষ্ট লাগতো । দাদু কত শাহানাকে নিয়ে মজা করত । একদিন বাড়ীতে গেলে দাদু বলল," শাহানা আজকে আমার সাথে গল্প করবে তুই গিয়া ঘুমা ।"
শুভ বাদ্য ছেলের মত চলে আসলো ও এসে শুয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম আসছে না । একবার এ পাস গোড়ে আবার অন্ন পাস । শেষে দাদুর ঘরে গিয়ে শাহানাকে নিতে যায় ।দাদুত দেখে হেসেই খুন । শাহানাও বুজল তাকে ছাড়া শুভ থাকতে পারবেনা এক মুহূর্ত । এর পর থেকে আল্লাহ্ এর কাছে একটাই প্রার্থনা করত যাতে তাদের এক সাথে মৃত্যু হয় ।
শুভ ও শাহানার বয়স বেড়েছে মাথার কালো চুল সাদা হয়েছে ,শরীরের চামড়া কুচকে গেসে ।তারা এখন থাকে গ্রামের বাড়ীতে । তাদের দুই সন্তান এক ছেলে ও এক মেয়ে ।মেয়েটা মায়ের মত ডাঃ হয়েছে তবে মায়ের চেয়ে অনেক বড় দেশ বিদেশে যার সুনাম আর ছেলে আর্মি মেজর । ছেলে মেয়ে দুজনি খুব ব্যাস্ত কিন্তু তারা বাবা মাকে কখন ভোলে না ।ছেলে একটা ছেলে ও মেয়ের একটা মেয়ে আছে ।যখন তারা বেড়াতে আসে তখন দাদু দাদি করতে করতে অস্থির হয়ে যায় ।তারা শুভ ও শাহানার সিপ নিয়ে মাছ ধরতে যায় আর মাছ ধরতে পারলে কি যে আনন্দিত হয় তা বলার বাইরে ।আর এটা দেখে শুভর চোখের কোণায় জল চলে আসে । সে শুধু আল্লাহ্র কাছে সুক্রিয়া করে ।
শুভ ও শাহানা এখন বাইরে বসে আকাশের চাঁদ দেখে আর চিন্তা কবে যেন শেষ হয়ে যায় এই চাঁদ দেখা । এখন শুভ প্রতিদিন সকালে কোরআন তেলাওয়াত করে । যখন নাতি নাতনী বাড়ীতে দুই পাসে বসে কোরআন তেলাওয়াত শোনে । এ দৃশ্য দেখে শুভর চোখে জল চলে আসে পরে দুজনকে জড়িয়ে ধরে ।
ছেলে ও মেয়ে দুজনেই এসেছে বেড়াতে সাথে ছেলের বউ ,মেয়ের জামাই ও নাতি পুতি । বাড়ীতে একটা উৎসব উৎসব ভাব সবাই মিলে অনেকদিন পর একসাথে রাতের খাবার খেলো এরপর সবাই মিলে উঠানে বসে চাঁদ দেখল ।এর পর সবাই যার ঘরে গেল ।
মাঝ রাতে শুভ ও শাহানা তাহাজ্জতের নামাজ পড়ল এর পর আবার শুয়ে পড়ল । পুব আকাশে সূর্য উঠছে আস্তে আস্তে সূর্যের তেজ বাড়ছে সাথে সাথে বাড়ীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। চারপাশে কান্নার রোল পরে গেসে ছেলে মেয়ের কান্না দেখে গ্রাম বাসিও চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না ।সবাই কাঁদছে,সবাই কাঁদছে ।
উৎসর্গ ঃ
আমি যাকে এ গল্পটা উৎসর্গ করছি জানি সে এই গল্প পড়া ত দুরের কথা জানবেও না , সে মানুষটি আমার দাদা ।
সকাল ৬ টায় শুভ ২ কাপ কফি মগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করল । শাহানাকে ঘুম থেকে জাগালো শুভ , শাহানা হাত মুখ ধুয়ে আসলে শাহানার হাতে কফি মগ দেয় শুভ । কফি মগ দেখেই অবাক হয় শাহানা কারন কফির উপরের অংশে সুন্দর পাতা আঁকা ও কি সুন্দর সুগন্ধ বের হচ্ছে। দুজনে কফি খেয়ে নিচে নেমে সবার সাথে নাস্তা করতে বসল । আত্মীয় স্বজন সবার সাথে কথা অ পরিচয় হতে হতে সাড়া দিন চলে গেল শাহানার ।
রাত ১২ টা শুভ ঘুম থেকে উঠে শাহানাকে জাগালো । শাহানা শুভকে বলল,"কি বাপার!"
শুভ বলল," তাড়াতাড়ি তৈরি হও আমরা বাইরে যাবো ।"
" বাইরে কথায়?"
"এত কথা না বলে তৈরি হও আমি গাড়ি বের করছি। "
শাহানা সবুজ রঙের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি পড়ে নিচে নামল। শাহানাকে দেখতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে কিছুক্ষণ শুভ শাহানার দিকে তাকিয়ে রইল এতে শাহানা লজ্জায় লাল হয়ে গেল । শুভ গাড়ীর দরজা খুলে দিলো । গাড়ি চলছে অজানা গন্তবে ।
গাড়ীর কাচ দুটো নামানো বাইরে থেকে হিহি করে বাতাস ডুকছে । ঢাকার রাতের শহর শুভ অনেকবারই দেখেছে কিন্তু আজ যেন অন্যরকম লাগছে । আসে পাসের সব কিছুই ভাল লাগছে । রাতের ঢাকা থাকে নিরব মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রাকের শব্দে সেই নীরবতা ভাঙ্গে । শুভদের গাড়ি ঢাকা পার হয়ে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছে । শাহানা গাড়ীর জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাইরের দৃশ্য দেখছে । বাইরের বাতাস শাহানার পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট বাতাস মনে হচ্ছে । শুভ আশুলিয়া এসে গাড়ী থামাল । দুই পাশে থই থই পানি এখন শরৎকাল হওয়ায় পানি খুব পরিষ্কার লাগছে মনে হচ্ছে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে । শুভ ও শাহানা রাস্তার পাসে ঘাসের উপর বসল । তাদের কাছে ঘাসকে ঘাস মনে হচ্ছিলনা মনে হচ্ছিল নরম কার্পেট । শুভ শাহানার একটা হাত নিজের হাতের উপর রেখে শাহানার দিকে তাকাল চাঁদের আলোতে যেন শাহানার মুখ জ্বলজ্বল করছিলো । শুভ মনেমনে ভাবে শাহানাকে না দেখে বিয়ে করাটা সবচেয়ে ভাল হয়েছে , করণ সে শাহানাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নতুন ভাবে আবিস্কার করবে বারবার তাকে নতুন মনে হবে পুরনো হওয়ার আগেই হয়ত ইহলোক ত্যাগ করবে ।
শাহানার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে তার কাছে মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় পার করছে । শাহানা শুভর ঘারে মাথা রেখে আকাশ দেখছে । আজ মনে হয় তাদের জন্যই আকাশটা এত সুন্দর করে সেজেছে । আকাশে বিন্দু মাত্র মেঘ নেই সেই মেঘহীন আকাশের বুকে এক ফালি চাঁদ আর বেশি ভাল লাগছে । ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি তাদের কানে আসছে । আর কিছুক্ষণ পর সকাল হবে শুভ ও শাহানা বাড়ী ফিরে আসার জন্য রওনা দিলো ।
বাবা মা ও দাদু আজ গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছে শুভর। বাড়ী পুরো ফাঁকা হয়ে গেল । শাহানা একজন এমবিবিএস ডাঃ আর শুভ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক । শুরু হল তাদের বাস্ত জীবন তারা বাস্ত থাকলেও নিজেদের জন্য নিদিষ্ট সময় কখন কাওকে দিত না । শুভ সেই বিয়ের প্রথম দিন শাহানার আগে উঠতে পেরেছিল । ঘুম ভাংগার সাথে সাথে শাহানা শুওর জন্য এক কাপ কফি দেয় আর শুভ দ্রুত গিয়ে শাহানার জন্য কফি বানিয়ে আনে । দুজনে কফি খেয়ে নাস্তা করে যার যার কর্মক্ষেত্রে যায় । প্রতিদিনই এভাবে কাটে তাদের কিন্তু শুক্রবার একটু আলাদা । সাধারণত রান্নার দায়িত্ব থাকে শাহানার উপর কিন্তু এই দিন শুভ বিভিন্ন মজার খাবার তৈরি করে যা সে শিখেছে তার মায়ের কাছ থেকে । প্রতিটা শুক্রবারই তাদের জন্য ঈদের মত ।
শাহানা ও শুভ প্রায়ই সুযোগ পেলে গ্রামে বেড়াতে যায় । গ্রামের বাড়ীতে শুভদের আধা পাকা দুটি ঘর আছে একটি শুভর বাবা মার অন্যটি শুভর । শুভ ও শাহানার ঘরটা সুন্দর করে সাজানো ঘরের এক কোণায় থরে থরে সাজানো বুক সেলফ অন্য পাসে একটা খাট পাসে একটা পড়ার টেবিল । শুভর মাছ ধরার প্রচণ্ড নেশা এজন্য তার ঘরে কয়েক ডজন মাছ ধরার সিপ আছে । শুভর রাত্রে চাঁদ দেখার খুব শখ তাই সে ঘরের চালের একটা অংশ কাচ বিয়ে তৈরি করেছে যাতে সে শুয়ে থেকেও চাঁদ দেখতে পারে । তাদের বাড়ীটা বেশ বড় তাদের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সবজি আসে তাদের বাড়ীর আগিনা থেকে । তাদের একটা পুকুর যেখানে গোসল করার জন্য শানবাঁধানো ঘাট আছে । তার বাবা পুকুরে কার্প জাতিও মাছ ও কচ্ছপ চাষ করে । পুকুরের চার পাসে নারকেল গাছের সারি । বিকেলে বসার জন্য শুভ দুটি বেঞ্চ তৈরি করেছে । শুভ ও শাহানা বাড়ীতে গেলে দুজনে সিপ দিয়ে মাছ ধরে পুকুরে । সারারাত মাছ ধরাতে দুজনেই ভীষণ রকম আনন্দ পায় । তাদের এ রাতে মাছ ধরার কথা বাড়ীর কেউ জানতোনা । চুপিচুপি মাছ ধরে বালতিতে জিইয়ে রাখত । সকালে উঠে সবাই অবাক হত । একদিন দাদুত প্রায় ভয় পেয়ে গিয়ে ছিল তাদের দেখে । পরে দাদু বলে,"দুই নায়ক নায়িকা মিলা মাছ ধরা হচ্ছে আমাকে না জানিয়ে!"
শুভ ও শাহানা বললাম ,"ভুল হয়ে গেসে । মাফ করে দাও ।"
"যা দিলাম মাফ করে । আমি যাই ।" বলে দাদু চলে গেল ।
আজ শুভ ও শাহানার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন । গ্রামে গেলে যার কোরআন তেলাওয়াত এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গত । যেই পছন্দ করে শাহানাকে শুভর বউ হিসেবে ঠিক করেছে সেই দাদু আজ ইহলোক ত্যাগ করেছে ।শুভ সব সময়ই বাস্তববাদী সে বিশ্বাস করে" যখন একজন মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তখন সে ইহলোক ত্যাগ করে পারি জমায় না ফেরার দেশে"। কিন্তু আজকে তাকে এ চরম সত্য সান্তনা দিতে পারছেনা সে কাঁদছে অঝর ধারে কাঁদছে সাথে শাহানাও কাঁদছে। দাদু প্রায়ই বলত ,"একা কবরে থাকতে তোর দাদুর খুব কষ্ট হচ্ছে যে আমাকে ছাড়া কখনও বাপের বারি একা থাকেনি সে এখন একা শুয়ে আছে আমাকে ছাড়া "। আরও বলত মরণের পর তোর দাদির পাসে কবর দিস "। এসব কথা শুনলে শুভর খুব কষ্ট লাগতো । দাদু কত শাহানাকে নিয়ে মজা করত । একদিন বাড়ীতে গেলে দাদু বলল," শাহানা আজকে আমার সাথে গল্প করবে তুই গিয়া ঘুমা ।"
শুভ বাদ্য ছেলের মত চলে আসলো ও এসে শুয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম আসছে না । একবার এ পাস গোড়ে আবার অন্ন পাস । শেষে দাদুর ঘরে গিয়ে শাহানাকে নিতে যায় ।দাদুত দেখে হেসেই খুন । শাহানাও বুজল তাকে ছাড়া শুভ থাকতে পারবেনা এক মুহূর্ত । এর পর থেকে আল্লাহ্ এর কাছে একটাই প্রার্থনা করত যাতে তাদের এক সাথে মৃত্যু হয় ।
শুভ ও শাহানার বয়স বেড়েছে মাথার কালো চুল সাদা হয়েছে ,শরীরের চামড়া কুচকে গেসে ।তারা এখন থাকে গ্রামের বাড়ীতে । তাদের দুই সন্তান এক ছেলে ও এক মেয়ে ।মেয়েটা মায়ের মত ডাঃ হয়েছে তবে মায়ের চেয়ে অনেক বড় দেশ বিদেশে যার সুনাম আর ছেলে আর্মি মেজর । ছেলে মেয়ে দুজনি খুব ব্যাস্ত কিন্তু তারা বাবা মাকে কখন ভোলে না ।ছেলে একটা ছেলে ও মেয়ের একটা মেয়ে আছে ।যখন তারা বেড়াতে আসে তখন দাদু দাদি করতে করতে অস্থির হয়ে যায় ।তারা শুভ ও শাহানার সিপ নিয়ে মাছ ধরতে যায় আর মাছ ধরতে পারলে কি যে আনন্দিত হয় তা বলার বাইরে ।আর এটা দেখে শুভর চোখের কোণায় জল চলে আসে । সে শুধু আল্লাহ্র কাছে সুক্রিয়া করে ।
শুভ ও শাহানা এখন বাইরে বসে আকাশের চাঁদ দেখে আর চিন্তা কবে যেন শেষ হয়ে যায় এই চাঁদ দেখা । এখন শুভ প্রতিদিন সকালে কোরআন তেলাওয়াত করে । যখন নাতি নাতনী বাড়ীতে দুই পাসে বসে কোরআন তেলাওয়াত শোনে । এ দৃশ্য দেখে শুভর চোখে জল চলে আসে পরে দুজনকে জড়িয়ে ধরে ।
ছেলে ও মেয়ে দুজনেই এসেছে বেড়াতে সাথে ছেলের বউ ,মেয়ের জামাই ও নাতি পুতি । বাড়ীতে একটা উৎসব উৎসব ভাব সবাই মিলে অনেকদিন পর একসাথে রাতের খাবার খেলো এরপর সবাই মিলে উঠানে বসে চাঁদ দেখল ।এর পর সবাই যার ঘরে গেল ।
মাঝ রাতে শুভ ও শাহানা তাহাজ্জতের নামাজ পড়ল এর পর আবার শুয়ে পড়ল । পুব আকাশে সূর্য উঠছে আস্তে আস্তে সূর্যের তেজ বাড়ছে সাথে সাথে বাড়ীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। চারপাশে কান্নার রোল পরে গেসে ছেলে মেয়ের কান্না দেখে গ্রাম বাসিও চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না ।সবাই কাঁদছে,সবাই কাঁদছে ।
উৎসর্গ ঃ
আমি যাকে এ গল্পটা উৎসর্গ করছি জানি সে এই গল্প পড়া ত দুরের কথা জানবেও না , সে মানুষটি আমার দাদা ।
No comments:
Post a Comment